প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেত্রী নিশাত নারায়ণগঞ্জ কারাগারে

মোশতাক আহমেদ শাওন | ১৯ জুলাই ২০২২, ০৯:০৯

সংগৃহীত

প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় কুমিল্লা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিশাত আহমেদ খানকে এবার কারাগারে পাঠিয়েছে নারায়ণগঞ্জের আদালত।

রবিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমলী আদালত-৩ এর বিচারক বেগম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।

নিশাত আহমেদ খান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ২০২১ সালে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও কেন্দ্রীয়ভাবে তাকে বহিস্কার করা হয়নি।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ জানান, রবিবার ভোরে কুমিল্লার হাউজিং এস্টেটের বাসা থেকে নিশাতকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। এর পরপরই তাকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে নেয়া হয়। জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ৭ জুলাই প্রবাসী মিনহাজ নারায়ণগঞ্জের আদালতে নিশাত আহমেদ খানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার বাদী প্রবাসী মিনহাজুর রহমান জানান, নিশাত আহমেদ খান নারায়ণগঞ্জে আমার ৩০ শতাংশ জমি হেবা দলিল করে অবৈধভাবে দখল করে নেন। শুধু তাই নয়, তিনি আমার সম্পত্তির লোভে ভুয়া কাবিননামা বানিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেন। পরে ভূয়া কাবিননামা তৈরির অভিযোগে মামলা করলে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. জাইদুল হোসাইন আদালতে এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে জেলহাজতে।

তিনি জানান, আমার বাড়ি কুমিল্লা নগরীর রাজাপাড়ায়। এলাকার শহীদুল হক স্বপনের মাধ্যমে নিশাতের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ওই সময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জমিজমা, কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটে পাঁচতলা বাড়ি ও ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাট দেখাশোনা ও ভাড়া সংগ্রহের জন্য একজন দরকার ছিল। সে সময় নিশাত আমাকে সাহায্য করার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে মৌখিক চুক্তিতে দায়িত্ব দেই। তিনি আরো জানান, ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট নগরীর অশোকতলা এলাকার নেত্রী ফাহমিদা জেবিনের বাসায় নিশাত অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে মিনহাজ সাজিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিয়ের তারিখ দেখিয়ে কাবিননামা বানান। কাজী মো. জাইদুল হোসাইনের মাধ্যমে দু’জনের (মিনহাজ-নিশাত) একই জন্মতারিখ দেখিয়ে ভুয়া কাবিননামাটি বানানো হয়েছিল। বিয়ে অনুষ্ঠানের যে তারিখ বলা হচ্ছে সেই সময় তিনি ইংল্যান্ডে ছিলেন।

প্রবাসী মিনহাজ বলেন, ওই সময় নিশাত তার ধানমন্ডির ফ্ল্যাট দখল করে সেখানে তার মা, দুই সন্তান ও মেয়ের স্বামীসহ বসবাস শুরু করেন। এর আগে ২০১৭ সালে নিশাত পাসপোর্টে নিজেকে মিনহাজের স্ত্রী বলে ভুয়া তথ্য দিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের এপ্রিলে দেশে ফিরে নিজের ফ্ল্যাটে গেলে নিশাত, তার মেয়ে ও মেয়ের স্বামী প্রবেশে বাধা এবং তাকে নানাভাবে হুমকি দেন।

তিনি আরো জানান, একপর্যায়ে নিশাত কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটে তার ৫তলা বাড়ির কেয়ারটেকারকে মারধর করে একটি ফ্ল্যাট দখল করে নেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় নিশাত বাড়ির কেয়ারটেকার জিলানী ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন। সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য এই নারী ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তাকে স্বামী দাবি করছেন। ভুয়া নিকাহনামায় নিশাত নিজেকে তালাকপ্রাপ্তা বললেও তিনি তা নন। তার সন্তান, মেয়ের স্বামী ও নাতি-নাতনি রয়েছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: