যাত্রাবাড়ীতে স্কুল মাঠ ও শহীদ মিনার দখল করে শৌচাগার নির্মানের অভিযোগ, ক্ষুব্দ এলাকাবাসী

ডেমরা প্রতিনিধি | ৮ জুলাই ২০২২, ০৬:০১

সংগৃহীত

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি কোনাপাড়া স্কুল এণ্ড কলেজের প্রধান ফটকের পাশে শহীদদের স্মরনে নির্মিত জাতীয় "শহীদ মিনার" এর সাথে টয়লেট নির্মানকে অবমাননা বলে অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। 

গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বরাদ্দ পেয়ে এই টয়লেট নির্মান করা হচ্ছে। যদিও পাড়াডগার মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ফ্লোরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার সকালে স্কুল ভবনটির সামনে এলাকাবাসি অভিযোগ করে বলেন, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান সাধু এলাকায় শিক্ষিত সমাজ গঠনের স্বার্থে জমি দান করে নিজ নামে গড়ে তুলেছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে এখানে তার নামে স্কুল এণ্ড কলেজ এবং পাড়াডগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। একইসাথে অমর ২১ শে শহীদদের স্মরনে নির্মিত হয় একটি শহীদ মিনার। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারীর দিনে বীর সকল শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে স্বরন করা হয়। 

জানা গেছে, পাড়াডগাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৬৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপির বিশস্ত কর্মী এস এম সোহেল। আর মান্নান স্কুল এণ্ড কলেজ এর গর্বনিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কামরুজ্জামান কামরুল। তিনিও ঢাকা -৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু সমর্থক।   

স্কুলটিতে এত শৌচাগার থাকার পরও শহীদ মিনারের সাথে টয়লেট নির্মান কেন, জানতে চাইলে সাব কন্টাক্টার সোলাইমান বলেন, আমরা কাজ পেয়েছি, তাই কাজ করছি। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না।

তরিকুল ইসলাম নামে একজন শ্রমিক। তিনি বলেন, শহীদ মিনারের সাথে টয়লেট নির্মান ঠিক না। আমরা তো শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। কন্টাক্টার যা বলবে তাই করতে বাধ্য। 

এবিষয়ে ৬৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি এস এম সোহেল বলেন,স্কুলের পাশে শৌচাগার নিমার্নের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, এটি রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার একটি অপপ্রচার। যতটুকু জানি এখানে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে নিচতলায় নামাজের ঘর, দুতলায় হাত ধোঁয়ার ও তিনতলায় হবে মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের কক্ষ। একটি মহল আমার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যাচার করছে। আমি সাংস্কৃতিক ও বিনোদনের বিষয়ে কখনোই বিরোধ পোষণ করি না। একটা মহল অবৈধভাবে অর্থ উর্পাজন করে ধরাকে ছোয়া বলে মনে করে না। স্কুলের পাশে শৌচাগার নির্মানের সাথে আমি জড়িত নই। সরকারিভাবে টেন্ডার হয়েছে এই কাজের, তারাই কাজের তদারকি করছে।স্কুলের কমিটির পাওয়ার পর প্রাথমিক স্কুল হতে এক টাকা ও নেয় নি অথচ হাই স্কুলের সভাপতি কামরুল অত্র প্রতিষ্ঠান ও দোকান ভাড়ার বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। হাই স্কুলের কমিটি পাওয়ার পর পরই বিলাসবহুল গাড়িতে কীভাবে চলাচল করে তা সবাই জানে।গত কয়েকদিন সামাজিক মহলে মান্নান হাই স্কুলের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুলের নামে সমালোচনার পর সে আমার নামে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার করছে। সাধারণ জনতার সাথে আমি সবসময়ই আছি।

বিদ্যালয়ের মাঠ দখলের বিষয়ে বলেন, একটি মহল বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে টাকার বিনিময়ে ক্যান্টিন নির্মান ও মাঠের চারপাশে অবকাঠামো তৈরি করে বিনোদনের সুযোগে বাধা প্রয়োগ করছে বলে জানান তিনি।

শহীদ মিনারের সাথে টয়লেট নির্মান বন্ধে প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মান্নান স্কুল এণ্ড কলেজ এর সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, এটা কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। এটা জাস্ট ক্ষমতার দাপট। 

তবে আবদুস ছালাম নামে কোনাপাড়ার একজন বাসিন্দা বলেন, নেতৃত্ব আর ক্ষমতার দাপটে ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রশয়ে লোকজন ফুটপাতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করছে। এককথায় বলতে গেলে যা ইচ্ছে তাই করছে। কোনো ভালো মানুষ বাঙালির অনুভূতি জায়গায় আঘাত করতে পারে না। শহীদ মিনারের সাথে টয়লেট নির্মান মানে আমাদের অনুভূতিতে আঘাত করা। একই অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী স্থানীয় অনেক বাসিন্দা ও অভিভাবকরা।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: