জাবি ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে রাজনৈতিক প্রচারণার অভিযোগ

আব্দুল মান্নান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | ২৫ আগষ্ট ২০২২, ২০:৪৬

সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার ও দলীয় কর্মী বানাতে বায়োডাটা সংগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি, প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণীর নামে দলীয় মতাদর্শ প্রচার করে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা। এ সময় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় সংশ্লিষ্ট বক্তব্য প্রদান করেন তারা। এছাড়া কর্মী সংগ্রহের জন্য আমাদের নাম, বিভাগ, হল ও মোবাইল নম্বরসহ নানা তথ্য নেন।

এদিকে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের কোষাধ্যক্ষ আলিফ মাহমুদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক ইমতিয়াজ অর্ণব ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ফলে তাদের আয়োজনে ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির নেতৃত্বে অন্য নেতাকর্মীরা গিয়েছে বলে জানায় প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, টিউটোরিয়াল পরীক্ষা শেষে অনেকেই ক্লান্ত ছিলাম। তারা ক্লাসে ঢুকে আমাদের বসতে বলে। একে একে তারা পরিচয় দেন। সেখানে ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন বড় ভাই থাকায় ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে তাদের কথা শুনি। তাদের এক ভাই উনি নাকি সভাপতি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের দলীয় কাজের পরিধি তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা কাজ করেন-এসব বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের কুইজ পরীক্ষা নেয় এবং সেখানে আমাদের নাম, বিভাগ, হল, মোবাইল নম্বর লিখতে বলে। আমরা সেগুলো লিখি। তারা আরও জানায়, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যিনি এই কুইজে প্রথম হবেন তাকে আট হাজার টাকা সমমূল্যের বই দেওয়া হবে।

বিভাগ তিনটির কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা ব্যক্তিগত তথ্য দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি।

এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের কোষাধ্যক্ষ আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তাদের একটা কুইজ নেওয়া হয়েছিল। সামনে আমাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান মূলত সেই অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতেই আমরা বিভিন্ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। প্রতিবছর নবীনবরণের আগে আমরা নবীনদের কুইজ পরীক্ষা এবং পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করে থাকি।
তিনি আরও বলেন, আমরা রাজনৈতিক ও সামাজিক দু’টো কাজ করি। এ ক্ষেত্রে আমরা রাজনৈতিক কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্লাসরুমে যাইনি।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, প্রতিবছর আমরা নবীনবরণের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি বিভাগে গিয়েছিলাম। নবীন ব্যাচের ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ (সিআর) এর মাধ্যমে যোগাযোগ করেই আমরা বিভাগে যাই৷ তাদের কোনো আপত্তি থাকলে আমরা বিভাগের সভাপতির অনুমতির মাধ্যমেই তাদের সাথে কথা বলে থাকি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারণার কোনো নিয়ম নেই। এমন তথ্য জানানো হলে তিনি বলেন, আমরা কি নিষিদ্ধ সংগঠন নাকি যে আমরা প্রচারণা করতে পারব না। আপনি বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আইনের কত ধারায় এটা নিষিদ্ধ রয়েছে? আমরা কি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে র‍্যাগ দেই নাকি? আমরা কুইজের বিজয়ীদের পুরস্কার পৌছে দেয়ার জন্য তাদের থেকে তথ্য নেই। কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নয়।

এদিকে শ্রেণিকক্ষে রাজনৈতিক প্রচারণায় ক্ষোভ জানিয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিকে আমরা সাধুবাধ জানাই। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার করুক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করা কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে বলে আমি মনে করি না। কুইজ প্রতিযোগিতার নামে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করা, ছাত্রীদের অনীহা থাকা সত্ত্বেও তাদের থেকে তথ্য নেয়া কাম্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, শ্রেণিকক্ষে গিয়ে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার করার কোনো নিয়ম নেই। আমরা কোনো সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরও জুনিয়রদের ক্লাসরুমের প্রবেশের অনুমতি দেই না। আমি খোজ নিয়ে দেখব যদি ঘটনাটি সত্য হয়ে থাকে তাহলে তাদের সাথে আলোচনা করে এধরনের কাজ বিরত থাকতে বলব। তারপরও যদি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেও গ্রহণ করব।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: