বিদেশী শিক্ষার্থী সংকটে জাবি

আব্দুল মান্নান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় | ২১ আগষ্ট ২০২২, ১৯:০৪

সংগৃহীত

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবেও পরিচিত। শিক্ষা ও গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। তবে নানা জটিলতায় বর্তমানে বিদেশী শিক্ষার্থী সংকটে ভূগছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত ছয় বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৩ জন বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে মো. শামস তাবরীজ নামে একজন নেপালি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে ভর্তির কয়েকদিন পর অজ্ঞাত কারণে তিনি অন্য দেশে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। এরপর ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। পরে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মো. আবিদ হোসাইন নামে একজন নেপালি ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এ্যানি লস্কর নামে একজন ভারতীয় শিক্ষার্থী ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হয়। তবে এ্যানি লস্করের পরিবার বর্তমানে টাঙ্গাইলে বসবাস করে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বলে জানা যায়, ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিষয়ভিত্তিক পরিপূর্ণ তথ্য না থাকায় এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য ও প্রচারণা না থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ-সুবিধার অভাব, গবেষণার মান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় জটিলতা, বিদেশিদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ, ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা, অনেক বিভাগে শুধু বাংলায় পাঠদান, আবাসন সংকট, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেশনজটসহ নানা কারণে বিদেশী শিক্ষার্থীদের নজরে নেই জাবি।

এদিকে এক সময় দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে প্রতিবছরই বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ‘৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’ অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (৪টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বাতীত) মধ্যে ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৬৭ জন।

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৫ জন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৮২ জন। তবে দেশে বিদেশী শিক্ষার্থী বাড়লেও জাবিতে কমে যাওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফলতিকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় তারা আগ্রহ হারাচ্ছে। তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা ও ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করলে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থী কম ভর্তি হওয়ার কারণ মূলত দুইটি। একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আকর্ষণীয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রশাসনের এক ধরনের উদাসীনতা রয়েছে। অন্যটি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অবস্থান নেই। এছাড়া ওয়েবসাইটে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের দিক নির্দেশনা না থাকায়, বিস্তারিত তথ্যের অভাব, প্রচার-প্রচারণার ঘাটতি থাকার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীর আগ্রহ হারাচ্ছে।

ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ দিদারে আলম মুহসিন বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য একটা পলিসি থাকা দরকার এবং তা ওয়েবসাইটে আপডেট করতে হয়। তাদের ভর্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে ও তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবধা প্রদান করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আমার মনে হয়।  

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার আমরা সবসময় উন্মুক্ত রেখেছি। সাধারণত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুক এটা আমরা চাই। এজন্য আমরা ওয়েবসাইট আপডেটসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: